Bipin Chandra Pal Biography in Bengali – ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব মহান ব্যক্তিরা অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল। এরকম মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রচেষ্টায় ভারত স্বাধীনতা পেয়েছিল। আজ আমরা এই পোস্টির মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিন চন্দ্র পালের জীবনী ও তার অবদান সম্পর্কে জানবো।
বিপিনচন্দ্র পালের সংক্ষিপ্ত জীবনী | Essay on Bipin Chandra Pal in Bengali
নাম | বিপিনচন্দ্র পাল |
জন্ম তারিখ | ১৮৫৮ সালের ৭এই নভেম্বর |
জন্ম স্থান | অবিভক্ত ভারতের (বর্তমানে বাংলাদেশে হবিগঞ্জ) |
পিতার নাম | রামচন্দ্র পাল |
সদস্য | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ব্রাহ্মসমাজ |
বিশেষ ভূমিকা | ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে |
পেশা | শিক্ষক ,লেখক ,ও সম্পাদক |
বিপিনচন্দ্র পালের রচনা
জন্ম ও পরিবার –
বিপিনচন্দ্র পাল ১৮৫৮ সালের ৭ই নভেম্বর অবিভক্ত বাংলার হবিগঞ্জ জেলাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হলো রামচন্দ্র পাল যিনি একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন।
পড়াশোনা ও কর্মজীবন –
বিপিনচন্দ্র পাল তার পড়াশোনা চার্চ মিশন সোসাইটি কলেজ থেকে শুরু ও পরবর্তীকালে পরবর্তীকালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগদান করেন। পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার পর তিনি শিক্ষকতা ও একটি পাবলিক লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিক হিসেবে কাজ করেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপিন চন্দ্র পালের অবদান –
পরবর্তীকালে তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বিখ্যাত লাল-বাল-পাল ত্রয়ী (লালা লাজপত রায়, বালগঙ্গাধর তিলক এবং বিপিনচন্দ্র পাল) এর একজন ছিলেন। এই ত্রয়ীর তিব্র আন্দোলনে ভারতে ব্রিটিশ শাসন কেঁপে উঠেছিল। বিপিন চন্দ্র পাল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন জাতীয়তাবাদী নেতা ছাড়াও একজন সাংবাদিক, লেখক এবং একজন চমৎকার বক্তা ছিলেন। তাকে ভারতে বিপ্লবী ধারণার জনক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
বিপিনচন্দ্র পাল ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে একটি বড় অবদান রেখেছিলেন, যা ব্যাপকভাবে জনসমর্থন পেয়েছিল। লাল-বাল-পালের এই ত্রয়ী বুঝতে পেরেছিল যে বিদেশী পণ্যের কারণে দেশের অর্থনীতি খারাপ হচ্ছে এবং মানুষের কাজও কমে যাচ্ছে। কারণ সকলে যদি বিদেশি পণ্যের প্রতি আগ্রহ দেখায় তাহলে দেশের ছোট শিল্প ও ছোট ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়বে সেই কারণে বিপিন চন্দ্র পাল স্বদেশী আন্দোলনের প্রচার করেছিলেন এবং ব্রিটেনে সমাপ্ত পণ্য বর্জন, ম্যানচেস্টার কলগুলিতে তৈরি পোশাক থেকে বিরত থাকার জন্য সাধারণ মানুষদের উৎসাহিত করেন।
জাতীয় আন্দোলনের প্রাথমিক বছরগুলিতে ‘গরম দল’ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল কারণ এটি আন্দোলনকে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। বিপিন চন্দ্র পাল জাতীয় আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ‘নরম দলের’ ‘প্রার্থনা ও আবেদন’ দ্বারা স্বরাজ অর্জন করা যেতে পারে না, কিন্তু স্বরাজের জন্য বিদেশী শাসনকে কঠোরভাবে আঘাত করতে হবে। এজন্যই বিপিনচন্দ্র পালকে স্বাধীনতা আন্দোলনে ‘বিপ্লবী ধারণার জনক’ বলা হয়।
বিপিন চন্দ্র এর রচনা ও পত্রিকা –
বিপ্লবী বিপিন চন্দ্র পাল আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের বিরোধ করার তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ ও পত্রিকাতে ব্রিটিশ সরকারের বিরোধ সব হন। তার লেখা কিছু বিখ্যাত গ্রন্থ যেমন – ভারতীয় জাতীয়তাবাদ,নাস্তিকতা , স্বরাজ এবং বর্তমান পরিস্থিতি ইত্যাদি। এছাড়া তার কিছু বিখ্যাত সম্পাদক করা পত্রিকা যেমন – দর্শক (১৮৮০), স্বরাজ, বন্দেমাত্রম ইত্যাদি।
অন্তিম জীবন –
জীবনের শেষের দিকে ১৯২২ সালের দিকে তিনি রাজনীতি ত্যাগ করেন ও কোনো রাজনীতি দলে না থেকেই লেখা লেখির মাধ্যমে তার প্রতিবাদ জানাতে থাকে। অবশেষে ১৯৩২ সালের ২০মে কলকাতায় এই মহান বিপ্লবী বিপিন চন্দ্র পাল পরলোক গমন করেন।
বিপিনচন্দ্র পালের জীবনী ও তার অবদান – Bipin Chandra Pal Biography in Bangla
(উপরের লেখাটি আপনি বিপিনচন্দ্র পালের রচনা লেখার জন্য ব্যবহার করতে পারেন তবে নিম্নে বিপ্লবী বিপিন চন্দ্র পালের জীবনী ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার এর ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হলো)
জন্ম ও পরিবার
বিপিনচন্দ্র পাল ১৮৫৮ সালের ৭এই নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের (বর্তমানে বাংলাদেশে) হবিগঞ্জ জেলার পোয়েল নামক একটি গ্রামে একটি জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হলেন রামচন্দ্র পাল যিনি একজন পার্সি পণ্ডিত এবং ক্ষুদ্র জমির মালিক ছিলেন।
বিপিনচন্দ্র পালের শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবন
বিপিনচন্দ্র পাল তার শিক্ষা জীবনের শুরু চার্চ মিশন সোসাইটি কলেজ থেকে শুরু করেন যা বর্তমানে সেন্ট পল ক্যাথেড্রাল মিশন কলেজ নাম পরিচিত। পরে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগদান করেন কিন্তু সেখানে তার শিক্ষা শেষে হওয়ার আগেই কলেজ ছেড়ে দেন। এরপর তিনি একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি কটি পাবলিক লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিক হন। সেই লাইব্রেরিতেই তিনি সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, শিবনাথ শাস্ত্রী এবং বি.কে গোস্বামীর মতো সে সময়ের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। যার তার মধ্যে দেশ ভক্তির ভাবনা জাগিয়ে তোলে।
এরপর থেকেই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান ও সামাজিক কার্যের জন্য রাহ্ম সমাজে যোগ দেন। ব্রাহ্ম সমাজের অন্যান্য সদস্যদের মতো তিনিও সামাজিক কুফল ও কুসংস্কারেরে বিরোধিতা করেন। তিনি খুব অল্প বয়সে জাতের ভিত্তিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন এবং তার চেয়ে উচ্চবর্ণের একজন বিধবাকে বিয়ে করেছিলেন, যার পরে তাকে তার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছিল। বিপিনচন্দ্র পাল তার কাজে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তাই পারিবারিক ও সামাজিক চাপ সত্ত্বেও আপোষ করেননি।
বিপিনচন্দ্র পালের অবদান ও রাজনৈতিক মতাদর্শ
বিপিনচন্দ্র পাল ১৮৮৬ সালে তিনি কংগ্রেস পার্টিতে যোগ নিজের রাজনৈতিক জীবনের হয়। ১৮৮৭ সালে কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রয়োগ করা ‘অস্ত্র আইন’ এর বিরুদ্ধে সবর হন ও এই আইন প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন করেন। বিপিন চন্দ্র পাল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিখ্যাত দল লাল-বাল-পাল (লালা লাজপত রায়, বালগঙ্গাধর তিলক এবং বিপিন চন্দ্র পাল) একজন অংশ ছিলেন। এই তিন জন মহান বিপ্লবী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন
বিপিনচন্দ্র এবং অরবিন্দ ঘোষ একটি জাতীয়তাবাদের প্রচার করেছিলেন যার আদর্শ ছিল পূর্ণ স্বরাজ, স্বদেশী, বিদেশী পণ্য বর্জন এবং জাতীয় শিক্ষা। বিপিন চন্দ্র পাল স্বদেশী, বিদেশী পণ্য বর্জন এবং জাতীয় শিক্ষার মতো কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এটি করলে ভারতের দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব দূর হবে।
সেই জন্য ১৯০৫ সালে বিপিন চন্দ্র পাল বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন , যা ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুদের সমর্থন পেয়েছিল। বিখ্যাত লাল-বাল-পালের এই ত্রয়ী বুঝতে পেরেছিল যে বিদেশী পণ্যের কারণে দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হচ্ছে ও দেশের মানুষ এবং দেশের ছোট কুটির শিল্প বেকার হয়ে পড়ছে। সেই কারণে বিপিন চন্দ্র পাল স্বদেশী আন্দোলনের প্রচার করেছিলেন এবং ব্রিটেনে সমাপ্ত পণ্য বর্জন, ম্যানচেস্টার কলগুলিতে তৈরি পোশাক থেকে বিরত থাকার জন্য সাধারণ মানুষদের আবেদন করেন। এই আন্দোলনের কারণে দেশের মানুষ বিদেশী পণ্য বর্জন শুরু করে তার ফলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়।
বিপ্লবি বিপিনচন্দ্র পাল ব্রিটিশ শাসনের প্রতি তার মোটেও আস্থা ছিল না এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে বিদেশী শক্তিকে অনুরোধ এবং অসহযোগিতার মতো অস্ত্র দ্বারা পরাজিত করা যাবে না। এই কারণে গান্ধীজীর সঙ্গে তার মতাদর্শগত পার্থক্য ছিল। এই কারণে তিনি জীবনের শেষ কয়েক বছরে তিনি কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।
বিপিন চন্দ্র পাল অনেক অনুষ্ঠানে মহাত্মা গান্ধীর ও অনন্যাও কংগেস নেতাদের সমালোচনা করেছিলেন এবং তার মতামতের বিরোধিতাও করেছিলেন। ১৯২১ সালে গান্ধীজীর সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন – “আপনার ধারণাগুলো যৌক্তিক নয় বরং জাদুভিত্তিক”।
বিপিনচন্দ্র পালের রচনা এবং সম্পাদনা
বিপিন চন্দ্র পাল একজন বিপ্লবী হওয়ায় পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ লেখক ও বিভিন্ন দেশ ভক্তি মূলক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তার দ্বারা লেখা বিভিন্ন পুস্তক ও পত্রিকায় তিনি সাধারণ মানুষের সমস্যা ও দেশভক্তি মূলক লেখার মাধ্যমে মানুষের স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখার জন্য প্রেরিত করে। বিপিনচন্দ্র পালের কিছু রচনা ও সম্পাদক করা পত্রিকা নিম্নে আলোচনা করা হল –
বিপিন চন্দ্র পাল তার জীবনকালে যে সমস্ত পুস্তক লিখেছিলেন
- সত্তর বছর (বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী)
- ভারতীয় জাতীয়তাবাদ
- নাস্তিকতা এবং সাম্রাজ্য
- স্বরাজ এবং বর্তমান পরিস্থিতি
- সংস্কারের ভিত্তি
বিপিন চন্দ্র পাল লেখকের সাথে সাথে সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন। বিখ্যাত “বন্দেমাত্রম ” ও “স্বরাজ” নামক বিপ্লবী পত্রিকার সম্পাদক বিপিন চন্দ্র পাল ছিলেন। এছাড়া তিনি আরো অনন্যা বিখ্যাত পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছিলেন যেমন – দর্শক (১৮৮০), দর্শক বেঙ্গল পাবলিক মতামত (১৮৮২), দ্য নিউ ইন্ডিয়া (১৮৯২) ইত্যাদি।
পরবর্তীকালে
কংগেসের সাথে বিপিন চন্দ্র পালের রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকার কারণে তিনি কংগেসে থেকে পদত্যাগ করেন ও পরবর্তীকালে ১৯২২ সালে তিনি সম্পূর্ণভাবে রাজনীতি ত্যাগ করেন। তবে তিনি শুধু রাজনীতি ত্যাগ করেন কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্বে প্রতিবাদ করার ছাড়েননি। যেহুতু তিনি একজন ভালো লেখক ছিলেন সেই কারণে তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ ও পত্রিকা লেখার মাধ্যমে তার বক্তব্য রাখতেন। পরবর্তীকালে ১৯৩২ সালের ২০ মে কলকাতায় মহান বিপ্লবী বিপিন চন্দ্র পালপরলোক গমন করেন।
উপসংহার
অবশেষে যদি আমরা বিপিনচন্দ্র পালের জীবনী বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা জানিতে পারি তিনি ভারতের স্বধীনতা সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা পাল করেছিলেন। এছাড়া তিনি তার রচনা ও পত্রিকার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দেশভক্তির ভাবনা জাগিয়ে তোলে। যদি বিপিন চন্দ্র পাল বায়োগ্রাফি পছন্দ হয়ে থাকে তবে অবশই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।