স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলা ও তার শৈশবকালের কিছু মজার গল্প

স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলা – স্বামী বিবেকানন্দ হলেন ঊনবিংশ শতকের একজন ভারতীয় সন্ন্যাসী এবং দার্শনিক। তার মহান অবদানের কথা তো আমরা জানি, আজ আমরা এই পোস্টটিতে স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলা এবং বিবেকানন্দের ছেলেবেলার কিছু মজার গল্পের ব্যাপারে পড়বো।

স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলা – Swami Vivekananda Childhood in Bengali

স্বামী বিবেকানন্দের শৈশবকালের কিছু গল্প – ১৮৬৩ সালে ১২ জানুয়ারি কলকাতার সিমলা পালিতে স্বামীজি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হলেন বিশ্বনাথ দত্ত, যিনি পেশায় একজন বিখ্যাত আইানজিবি ছিলেন। তার মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী যিনি একজন সাংসারিক রমনী তিনি পড়াশোনা সেই রকম না জানলেও রামায়ান ও মহাভারতের সমস্ত জ্ঞান ছিল। তার ঠাকুরদা হলেন দূর্গাপ্রসাদ তিনি সন্ন্যাসী ধর্ম পালনের জন্য সংসার ত্যাগ করেছিলেন।

স্বামী বিবেকানন্দের শৈশবকালের নাম ছিল বীরেশ্বর সংক্ষেপে বিলে। কিন্তু তার ভালো নাম ছিল নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ। সেই জন্য তাকে তার বন্ধু বান্ধব নরেন বলে ডাকতো।

ছোটবেলায় নরেন ছিল খুব জেদি ও সাহসী মনের একটি বালক তিনি যা ভালো মনে করতেন তাই করতেন। মাঝে মধ্যে খেলায় খেলায় সে সন্ন্যাসী সাঁজতে আর তার মা কে গিয়ে বলতো দেখি মা আমি কেমন সন্ন্যাসী সেজেছি। এই দেখে তার মা মাঝে মাঝে চিন্তিত হিয়ে যেতেন তিনি মনে করতেন যে নরেন বড়ো হয়ে তার ঠাকুরদার মতন সন্ন্যাসী হয়ে সংসার না তাগ করে ফেলে।

এছাড়া ছোট বেলা থেকেই নরেনের মনে ভক্তি ও আধ্যাত্মিক এর প্রতি আগ্রহ জেগেছিলো। নরেন্দ্রনাথ শৈশবকালে থেকেই রামসিতার এবং শিবের মূর্তি পূজা করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ পূজা করতে করতে ধ্যান মগ্ন হয়ে যেতেন।

বিবেকানন্দের শৈশবকালের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা

বিবেকানন্দের শৈশবকালের শিক্ষা – প্রথম শিক্ষা তার মা এর কাছে থেকে শুরু হই। তার মা তাকে সর্বপ্রথম বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার বর্ণমালা গুলির শিক্ষা দিয়েছেন। এছাড়া তার মা তাকে রমায়ান এবং মহাভারতের বিভিন্ন গল্প শুনতেন যা স্বামীজী খুবই মনোযোগ সহকারে শুনতেন।

এরপর নরেনের বয়স যখন ছয় বছর হয় তখন থাকে স্থানীয় এক পাঠশালায় ভর্তি করে দেওয়া হয়। এরপর পাঠশালা থেকে তাকে স্কুলে নিয়ে আসা হয়। নিযুক্ত করা হয় এক গৃহশিক্ষক। নরেন পড়াশোনা করতে ভালোবাসেন, এর পাশাপাশি ছেলেমানুষি দুষ্টুমিতে ছিলেন সবার সেরা।

ছোটবেলা থেকেই স্বামীজীর মধ্যে নেতৃত্বে ভাবের জাগরণ ঘটে গিয়েছিল। তার সমস্ত বন্ধুরা তাকে তার নেতা বলে মনে করত কারণ সে তার সমস্ত বন্ধুকে সমান ভাবে দেখতো কখনো কাউকে ছোট করত না। এছাড়া ছোট থেকে তার মন ছিল উদার সহানুভূতিসম্পন্ন।

শিক্ষক মহাসই যখন ক্লাস পড়াতেন, তখন নরেন ধ্যানমগ্ন হয় শিক্ষকের পড়া শুনতেন, এই দেখে শিক্ষক মহাশয় মনে করেন যে নরেন ক্লাস এ ঘুমাচ্ছে। এই দেখে তার শিকাক ভীষণ রেগে যাই, তখন নরেনকে পড়া ধরলে নরেন শিক্ষক মহাশয়ের সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে থাকে, এই দেখে শিক্ষক খুব খুশি হলে উঠে।

পরবর্তীতে তিনি ১৮৭১ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্থাপিত বিদ্যাসাগর ইনস্টিটিউট এ তার পড়াশোনা শুরু করে, সেখানে নরেন প্রতি বছর প্রথম স্থান অধিকার করতেন।

সেখানে পড়াশোনা চলাকালীন তার পিতার কর্ম সুত্রে নরেনকে তার সহ পরিবার মধভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের রায়পুর এ স্থানাতার করেন।

কয়েক বছর পর তারা কলকাতায় ফিরে আসে, এবং ১৮৭৯ সালে ষোলো বছর বয়সে মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়।

তিনি তার স্কুলের পড়াশোনার সাথে সাথে ছোট থেকেই বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ, দর্শন, বেদ, উপনিষদ ইত্যাদি পড়ার সাথে সাথে খেলাধুলা ও সামাজিক কাজকর্মে বিশেষ ভাবে অংশগ্রহন করতেন।

স্বামীজীর ছোটবেলার ওপর আলোকপাত করলে আমরা দেখতে পাই, ধ্যানপরায়ণতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা, কর্মপ্রিয়তা, পরােপকার ইত্যাদি ছিল তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এই সব বৈশিষ্ট্যগুলাে তাঁর চরিত্রের মধ্যে বীজের আকারে নিহিত ছিল। পরবর্তীকালে তাদের সম্যক বিকাশ ঘটে যায়।

আরো পড়ুন – Swami Vivekananda Bani

ছোটদের জন্য বিবেকানন্দের মজার কাহিনী

এতক্ষণ আমরা স্বামী বিবেকানন্দের ছোটবেলা এবং কিভাবে ছেলেবেলার তার প্রথম শিক্ষা তার মা এর কাছে থেকে প্রাপ্য হয় সেই ব্যাপারটি জানলাম। এইবার আমরা স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলার কিছু মজার ও আশ্চর্যজনক গল্প গুলোর ব্যাপারে পড়বো। আশা করছি বন্ধুরা আপনাদের এই গল্পের সংগ্রহটি ভালো লাগবে, তো চলুন গল্প গুলো শুরু করা যাক।

বিবকানন্দের ছেলেবেলার জনপ্রিয় গল্প (Vivekananda Childhood stories in Bangla)

নরেন এবং তার সমস্ত বন্ধুগন একটি বাগানে খেলা করতেন। নরেন ছিল সমস্ত ছেলেদের মধ্যে সব থেকে বুদ্ধিমান, তার সমস্ত বন্ধুরা তাকে নেতা বলে মনে করত। তারা সেই বাগানের বিভিন্ন ডালে লাফাজাফি করে খেলত, তাদের সেই খেলা দেখে সে বাগানের মালিক চিন্তিত হয়ে পড়ে, কারন তিনি মনে করেন যে যদি কেউ গাছ থেকে পড়ে যাই তাহলে তাদের খুব ক্ষতি হতে পারে, এই জন্য সেই বাগানের মালিক বালক গুলো সেখান থেকে চলে যেতে বলে, তারা সেখান থেকে চলে যাই, কিন্তুু পরের দিন তারা সেই বাগানে এসে আবার খেলত শুরু করে।

বাগান মালিকের কথা না শোনার কারণে সেই বাগানের মালিক বাগান থেকে বালকদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্য একটি পরিকল্পনা করেন।

তিনি বাগানটিতে গিয়ে বালক গুলোকে জড়ো করে বলেন যে এই বাগানের সমস্ত গাছ একটি ভয়ঙ্কর দৈত্য বাস করে। তার যদি এই গাছে লাফালাফি করে তবে সেই দৈত্য রেগে গিয়ে তাদেরকে ভয় দেখাবে। এই কথা শুনে সমস্ত বালক ভয় পেয়ে যায়। কিন্তুু নরেন ভয় পাইনি বরং দৈত্য কেমন হয় বাগান মালিক কে জিজ্ঞাসা করে ফেলে। তখন মালিক বলেন যে দৈত্য হয় ভীষণ ভয়ানক তার তাল গাছের মতন লম্বা l এই শুনে নরেনের মনে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। এবং নরেন সহ সব বালকেরা তারপর সবাই সেই বাগান থেকে নিজের নিজের বাড়ি চলে যাই।

বাড়ি গিয়ে নরেন ভাবে যে একবার দৈত্য দেখলে কেমন হয়, সেইজন্যই সে একা রাত্রিবেলায় চুপ করে সেই বাগানে গিয়ে গাছে উঠে বসে পড়ে দৈত্য দেখার জন্য। কিন্তু ভর হলে গেল কিন্তুু সেই বাগানে আর কোনো দৈত্য আর আসলোনা। অন্যদিক নরেনের বাড়িতে ভর বেলা থেকে তাকে তার ঘরে না পেয় হইচই শুরু হলে যাই। তাকে খুঁজে খুঁজে সকলে সেই বাগানে উপস্থিতি হই, বাগান মালিকও সেই বানানে ছুটে আসে। তারপর সকলে মিলে নরেন কে জিজ্ঞাসা করে যে রাতে কেন বাগানে এসেছিল, তখন নরেন বলেন যে দৈত্য দেখার জন্য সে বাগানে অপেক্ষা করছিল। এই শুনে উপস্থিত সকলেই অবাক হলে যাই।

বিবেকানন্দের শৈশবকালের দ্বিতীয় কাহিনী

একদিন নরেন তার বন্ধুর সঙ্গে বাজারে গিয়েছিল, যেখানে এক দোকান থেকে রামসীতার মূর্তি কিনে এনে পুজো শুরু করেন এবং দোতলার ঘরে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে থাকলে। চারদিকে খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল, কোথাও বিলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ির সকলে অত্যন্ত চিন্তাচ্ছন্ন। উপরের ঘরে গিয়ে দেখা গেল ঘরের দ্বার ভেতর থেকে বন্ধ করা হয়েছে। বাইরে থেকে সবাই দরজা খোলার জন্য ডাক দিতে থাকে ভিতর থেকে কোনো সারা না পাওয়াই, অবশেষে দরজা ভাঙা হল। দেখা গেল, নরেন রাম সীতার সামনে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে আছেন। অনেক কষ্টে তার ধ্যান ভাঙা হলো। বিরক্ত হয়ে নরেন বলেছিলেন – “এখন যেন কেউ তার কাজে বাধা না দেন”। সকলে নরেনের এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

স্বামীজীর ছেলেবেলার তৃতীয় গল্প

ছোটবেলা থেকে নরেন ছিল শিবের ভক্ত তিনি শিবের ঠাকুরের পুজো ও শিবের সামনে বসে ধ্যান করতে ভালোবাসতেন। মাঝে মধ্যে নরেন তার বন্ধুদের সাথে ধ্যান ধ্যান খেলতো। একদিন সেই রকম ধ্যান ধ্যান খেলার সময় একটি সাপ এসে হাজির হয়, এই দেখে তার বন্ধুগন পালিয়ে যায় আর নরেন উঠতে বললে নরেন ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকে।

কিছুক্ষন পর সাপটি নরেনকে কিছু না করে তার পাশ দিয়ে গিয়ে কোথায় যেন একটা অদৃশ্য হয়ে যায়। পরে নরেন ধ্যানভঙ্গ হলে নরেন বলেছিল যে সে তার বন্ধুদের ডাক বুঝতে পারেনি বরং তার মনে হচ্ছিল যে সে নাকি এক অন্য জগতের বাসিন্দা হতে গিয়েছে, যেখানে আনন্দের পরিপ্লাবন।