স্বামী বিবেকানন্দের রচনা | Essay on Swami Vivekananda in Bengali

You are currently viewing স্বামী বিবেকানন্দের রচনা | Essay on Swami Vivekananda in Bengali

[Note – স্বামী বিবেকানন্দের রচনা ( Swami Vivekananda Rachana Bangla ) সম্পর্কে এই পোস্টটি সপ্তম থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষাথীদের জন্য পরীক্ষায় অনুচ্ছেদ লেখার ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে।]

স্বামী বিবেকানন্দ প্রবন্ধ রচনা | Swami Vivekananda Rachana

স্বামী বিবেকানন্দের রচনা

ভূমিকা

Bangla Rachana Swami Vivekananda – ভারতের পবিত্র ভূমিতে একদিক মহাপুরুষ জন্ম গ্রহন করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন হলেন স্বামী বিবেকানন্দ তিনি একজন সন্ন্যাসী হওয়ার পাশাপাশি একজন মহান সমাজ সংস্কারক ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন যুবক সমাজের জন্য এক শ্রেষ্ঠ আদর্শ যার কারণে তার জন্মদিনকে “জাতীয় যুব দিবস” হিসেবে পালন করে হয়ে থাকে। ভারতের ইতিহাসে স্বামী বিবেকানন্দের অবদানকে সর্বদা স্মরণ করা হবে কারণ তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় সমাজ কল্যাণ ও ভারতের ঐতিবাহী সংস্কৃতি ও বেদ বেদান্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচারে অতিবাহিত করেছিলেন।

জন্ম ও পরিবার

স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন ভারতের ইতিহাসের অন্যতম বিশিষ্ট মহান ব্যক্তিত্ব ও একজন সন্ন্যাসী। তিনি ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্ত কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ছিলেন ও তার মাতা এখন গৃহিনীর পাশপাশি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতেন এছাড়া তার ঠাকুরদা সংস্কৃত ও পার্সিয়ান পণ্ডিত ছিলেন এবং যিনি কিনা তার পরিবার ছেড়ে মাত্র ২৫ বছর বয়সে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের আসল নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত কিন্তু ছেলেবেলায় তাকে নরেন বা বিলে বলে ডাকা হতো। নরেন শৈশবে খুব বুদ্ধিমানের সাথে সাথে দুরন্ত ছেলে ছিল। নরেন ছোট বেলা থেকে তার মা এর কাছে থেকে রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন গল্প শুনতে পছন্দ করতেন। তার পিতার প্রগতিশীল যুক্তিযুক্ত মনোভাব এবং মায়ের ধর্মীয় স্বভাব ছোট বেলা থেকেই নরেনকে তার চিন্তাভাবনা এবং ব্যক্তিত্বকে আকার দিতে সাহায্য করেছিল।

শিক্ষা জীবন

নরেন যখন ৮ বছর বয়সের হয় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি তার প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু করে।

যখন নরেনের বয়স হয় ১৬ বছর সেই সময়ে কলকাতার সবথেকে বিখ্যাত কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। এবং তিনি সেই পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। তারপর তিনি ১৮৮৪ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

এছাড়া তিনি স্কুল কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি স্বামী বিবেকানন্দ একজন আগ্রহী পাঠক, যিনি বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান, শিল্প ইত্যাদি সম্পর্কে সব ধরণের বই পড়তেন, তিনি রামায়ণ, মহাভারত, ভগবদ-গীতা এবং বেদ-বেদান্ত মতন হিন্দু সাহিত্যের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। এবং উপনিষদ যা শেষ পর্যন্ত তার চিন্তাকে রূপ দিতে সাহায্য করেছিল। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রশিক্ষণও পেয়েছিলেন।

আধ্যাত্মিক শিক্ষা – স্বামী বিবেকানন্দের রচনা

স্বামী বিবেকানন্দ তার যুবকালে ১৮৮১ সালে এক মহান আত্মা শ্রী পরমহংস রামকৃষ্ণ দেবের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয়। স্বামী বিবেকানন্দ ঈশ্বরে অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন এবং এটিই তাকে শ্রী রামকৃষ্ণের শিক্ষার দিকে পরিচালিত করেছিল। শীঘ্রই স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক শিষ্য হয়েছিলেন এবং তার আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি অন্যান্য শিষ্যদের নিয়ে শ্রী রামকৃষ্ণের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেছিলেন। ১৮৮৬ সালের ১৮ আগস্ট রামকৃষ্ণ দেবের পরলোক গমনের পরে স্বামী বিবেকানন্দ পরমহংস রামকৃষ্ণ দেবের কাছে থেকে পাওয়া আধ্যাত্মিক শিক্ষা গুলো প্রচারের জন্য উদ্যোগ নেন।

কর্মজীবন

জীবনের অর্থ সন্ধান এবং তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবের শিক্ষাগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বামী বিবেকানন্দ সমগ্র ভারতবর্ষ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যাত্রা শুরু করেন। ভারতে ভ্রমণকালে তিনি সেই সময় মানুষের দারিদ্র্য ও পশ্চাদপসরণ দেখেছিলেন ও এতে তিনি গভীর ভাবে চিন্তিত হন। দরিদ্রদের উন্নীত করার জন্য প্রয়োজন খাদ্য ও জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার সাথে সাথে দরিদ্রদের সবল করতে তিনি তাদের সাহায্য করার সাথে তাদের আধ্যাত্মিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য একধিক সভার আয়োজন করতেন।

স্বামী বিবেকানন্দ জনসাধারণের কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যে লোকেরা দরিদ্র হলেও তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে কখনও পিছনে রাখেনি কিন্তু সত্যবাদী জীবনে তারা কখনও এই শিক্ষাগুলি ব্যবহার করেনি। তিনি এই ধর্মীয় শিক্ষাগুলি মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ব্যবহার করার কথা ভেবেছিলেন এবং এটিই তিনি করেছিলেন। তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতা ছড়াতে শুরু করেছিলেন এবং শিক্ষাই এর মূল চাবিকাঠি, তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন।

স্বামীজীর শিকাগো বক্তৃতা

স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো বক্তৃতা প্রবন্ধ রচনা –

তার যাত্রাপথে যাওয়ার সময় তিনি তার গুরুর শিক্ষাকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন এবং একদিন সেই সুযোগটি আসে যখন ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে বিশ্বের ধর্ম সম্মেলন অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়। ভারতে তার শিষ্যগণ এবং প্রশংসকরা চেয়েছিলেন তিনি সেই বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে উপস্থিত হন ও সেখানে তার বক্তব্য রাখেন। তিনিও অনুভব করেছিলেন যে সম্মেলনে তার চিন্তাভাবনা ও ভারতবর্ষের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য একটি দারুন মঞ্চ হতে পারে। সুতরাং, চেন্নাইয়ের শিষ্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার স্বামী বিবেকানন্দের তার বন্ধু রাজস্থানের রাজা অজিত সিং এর সহযোগিতায় তিনি ১৮৯৩ সালের ৩১মে মুম্বাই থেকে আমেরিকা চলে গেলেন।

১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের দিনটি আসে, সেখানে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার ভারতীয় হিন্দু ধর্ম, তার সংস্কৃতি এবং গুরুকে স্মরণ করে তিনি এই সমাবেশকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, “আমার আমেরিকান বোন এবং ভাইয়েরা।” তার এই কথা শুনা মাত্র বিশ্ব ধর্মসভা উপস্থিত সকল দর্শক গণ হাততালি দিয়ে উঠে এবং সাধুবাদ জানাই। তারপর স্বামীজি ভারতের সংস্কৃতি, ধর্ম, বেদ বেদান্ত ইত্যাদি সম্পর্কে তার বক্তব্য তুলে ধরে।

শিকাগোতে স্বামীজীর সেই ঐতিহাসিক পর থেকে তিনি দেশের সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার নাম ছড়িয়ে পরে সেই সময় তাকে পশিমের দেশগুলিতে “ভারতীয় জ্ঞানের মেসেঞ্জার” হিসাবে ডাকা হত। এরপর তিনি শুধুমাত্র শিকাগোতে বক্তৃতার পর থেমে থাকেননি আমেরিকার পর লন্ডনেও তার চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে প্রায় ৪ বছর অতিবাহিত করেছিলেন।

সমাজ কল্যান

১৮৯৭ সালে ভারতে ফিরে আসার পরে তাঁর দরকার ছিল একটি সংগঠন, একদল লোক যারা এই উদ্দেশ্যে নিবেদিতভাবে কাজ করতে পারে, শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে ভারতের জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে এবং এজন্যই তিনি রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

রামকৃষ্ণ মিশনের সাথে জড়িত শিষ্যরা স্কুল, কলেজ, পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র, হসপিটাল ইত্যাদি পরিচালনা করছিল এবং ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশে এবং অন্যান্য দেশে ব্যাপক ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ পরিচালনা করছিল। পরবর্তীকালে স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৮ সালের ১ মে, তিনি বেলুড়ের সমস্ত শিষ্যের বাস করার জন্য একটি জায়গা তৈরি করেছিলেন, যাকে রামকৃষ্ণ মঠ বলা হত।

ভারত এবং বিশ্বের অনেক লোক স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল তার কারণে স্বামীজীকে অনেকে গুরু হিসেবে স্বীকার করেন, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মার্গারেট নোবেল পরবর্তীতে সিস্টার নিবেদিতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ভগিনী নিবেদিতা তার দেশ ছেড়ে কলকাতায় মেয়েদের পড়াতে শুরু করেন ও স্বামী বিবেকানন্দের সমাজ কল্যাণের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।

১৯০২ সালের ৪ জুলাই স্বামীর বয়স যখন প্রায় ৪০ বছর। সন্ধে ৭টা নাগাদ বেলুড় মঠে তার ধ্যান করার ঘরে তিনি নিজেকে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় রেখে পরলোক গমন করেন।

উপসংহার (Swami Vivekananda Rachana)

স্বামী বিবেকানন্দ তার সমগ্র মানবজাতির মধ্যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার এবং ভারতে দরিদ্রদের উন্নতিতে তার জীবনকে অতিবাহিত করেছিলেন এছাড়া পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে ভারতের সংস্কৃতি প্রচারে ও যুব সমাজকে তার সঠিক পথপ্রদর্শক হিসেবে স্বামী বিবেকানন্দের নাম চিরকাল ভারতের ইতিহাসে সুবর্ণ অক্ষরে উজ্বল করবে।


আশা করছি আপনাদের এই স্বামী বিবেকানন্দের রচনা সম্পর্কিত এই পোস্টটি পড়ে swami vivekananda bengali essay লিখতে পেরেছেন। এই রকম আরো নানান মহাপুরুষের রচনা ও বাণী পড়তে এই ওয়েবসাইটে সার্চ করতে পারেন।