সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর জীবনী | Sarvepalli Radhakrishnan Biography in Bengali

You are currently viewing সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর জীবনী | Sarvepalli Radhakrishnan Biography in Bengali

আজ আমরা ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন জীবনী সম্পর্কে জানবো। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ছিলেন ভারতের একজন মহান পন্ডিতগ, শিক্ষক, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি সর্বদা মনে করতেন – “শিক্ষকদের দ্বারাই দেশের ভবিষ্যৎ ভিত্তি মজবুত হতে পারে।” তাই তিনি দেশের শিক্ষা বেবস্থাকে সুগঠিত করার জন্য গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতি বছর ৫ই সেপ্টেম্বর ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের স্মরণে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালিত হয়। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান তার জীবনে স্বামী বিবেকানন্দ এবং বীর সাভারকরকে তার আদর্শ বলে মনে করতেন।

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন কে ছিলেন? (Sarvepalli Radhakrishnan Rachan)

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান ১৮৮৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির থিরুত্তানিতে একটি তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিলেন সর্বপল্লী বীরস্বামী এবং মাতার নাম সীতামা।

শৈশবে থেকেই রাধাকৃষ্ণান এর মধ্যে অদম্য জ্ঞানের তৃষ্ণা সহ একজন বুদ্ধিমান এবং উজ্জ্বল বালক ছিলেন কিন্তু তার পিতা চেয়েছিলেন ছেলেটি ইংরেজি না শিখিয়ে সংস্কৃত ভাষায় পড়াশোনা করিয়ে তাকে একজন পুরোহিত করতে। কিন্তু যুবক রাধাকৃষ্ণান তার পড়াশোনায় উৎকর্ষ সাধন করেন এবং মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজে বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হন এবং দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

এরপর তিনি তার কর্ম জীবন শুরু করেন ও তার সাথে তার অধ্যম চেষ্টার দ্বারা নিজেকে 20 শতকের সবচেয়ে বিশিষ্ট পণ্ডিতদের একজন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পরই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। ইউনেস্কোতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার পর পরবর্তীকালে তিনি একজন বিশিষ্ট ভারতীয় দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন।

এরপর ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ও পরবর্তীকালে১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পেশায় একজন শিক্ষাবিদ তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন ও স্বাধীনতার পর ভারতে শিক্ষানীতি তৈরিতে তিনি গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই ৫ সেপ্টেম্বর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর জন্মদিনকে ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

Sarvepalli Radhakrishnan Biography in Bengali

নামসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ( Sarvepalli Radhakrishnan)
জীবনকাল৫ই সেপ্টেম্বর ১৮৮৮ থেকে – ১৭এপ্রিল ১৯৭৫
পিতা ও মাতাসর্বপল্লী বীরাস্বামী (পিতা )
সীতাম্মা (মাতা )
দাম্পত্য সঙ্গীশিবকামু দেবী
পেশাশিক্ষক , দার্শনিক, লেখক
উপরাষ্ট্রপতি হিসাবেভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি তিনি
১৩ মে ১৯৫২ থেকে ১৩ মে ১৯৬২ পর্যন্ত।
রাষ্ট্রপতি হিসাবে১৩ মে ১৯৬২ ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি
হিসেবে নির্বাচিত হয়।
উল্লেখযোগ্য সন্মান ভারতরত্ন (১৯৫৪)
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর পরিচিতি

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর জীবনী কাহিনী

Biography on Sarvepalli Radhakrishnan in Bengali

জন্ম ও পরিবার

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান ১৮৮৮ সালের ৫ ই সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির থিরুত্তানিতে একটি তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল সর্বপল্লী বীরস্বামী এবং মাতার নাম সীতামা। রাধাকৃষ্ণান এর পিতা একজন পণ্ডিত ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং রাজস্ব বিভাগে কাজ করতেন ও তার মাতা একজন গৃহনী ছিলেন যিনি বাড়ির সমস্ত কাজকর্ম সামলাতেন। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান মোট পাঁচ ভাই ও এক বোন ছিল তাদের একসাথে শৈশব সেই গ্রামে কাটে । পরবর্তীকালে মাত্র ১৬ বছর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান ১০ বছেরের শিবকামুকে বিবাহ করেন। তার স্ত্রী তেমন শিক্ষিত না হলেও তেলেগু ভাষায় তার ভালো দখল ছিল।

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান এর প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

শৈশবকাল থেকে রাধাকৃষ্ণান বুদ্ধিমান ও আগ্রহী শিক্ষার্থী ছিলেন কিন্তু তার পিতা চেয়েছিলেন যে তার ছেলে ইংরেজি শিক্ষা লাভ না করে সংকৃত ভাষায় জ্ঞান লাভ করে একজন পুরোহিত হোক। কিন্তু ভাগ্য তরুণ ছেলেটির জন্য জীবনের অন্য কিছুই পরিকল্পনা করেছিল। যাইহোক তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষার শুরু তিরুপতিতে অবস্থিত লুথেরান মিশন নামক একটি একটি খ্রিস্টান মিশনারি প্রতিষ্ঠানে করেন।

১৯০২ সালে, তিনি ম্যাট্রিকুলেশন স্তরের পরীক্ষায় ভালো নম্বরে উত্তীর্ণ হন যার জন্য তাকে একটি বৃত্তিও দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১৯০৪ সালে কলা অনুষদের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।

এরপর তিনি হাইস্কুল শিক্ষার জন্য তিনি ভেলোরের ভুরহিস কলেজে যোগ দেন। যখন তার ১৭ বছর বয়স হয় তখন মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজে (মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত) যোগদান করেন। তিনি সেখান থেকে ১৯০৭ সালে স্নাতক হন এবং একই কলেজ থেকে তার মাস্টার্সও শেষ করেন।

শিক্ষক হিসেবে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তার স্নাতকোত্তর শেষ করার পর প্রেসিডেন্সি কলেজে দর্শনের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯১৬ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত তিনি মাদ্রাজ রেসিডেন্সি কলেজে দর্শনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেন। ১৯১৮ সালে তিনি মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা দর্শনের অধ্যাপক হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯২১ সালে রাধা কৃষ্ণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক মনোনীত হন। ১৯২৩ সালে ডক্টর রাধাকৃষ্ণনের বই “ভারতীয় দর্শন প্রসাদ” প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের অধ্যাপক হন। ১৯৩১ সালে সর্বপল্লী অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ১৯৩৯ সালে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন এবং ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর রাজনৈতিক জীবন

এরপর ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তার শিক্ষকতা জীবন প্রায় সম্পর্ণ করার পর ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর তিনি পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর কৃতিত্ব রাজনীতিতে যোগদান করেন।

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান তার ইউরোপ এবং আমেরিকা সফর থেকে ভারতে ফিরে আসেন পর জওহরলাল নেহেরু রাধাকৃষ্ণনকে একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রদূত হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে কূটনৈতিক কাজ করার আহ্বান জানান। যার জন্য তিনি ১৯৪৭থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত গণপরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি তার সরল এবং খাঁটি আচরণের একজন মানুষ ছিলেন। এরপর তিনি ১৩ মে ১৯৫২ থেকে ১৩ মে ১৯৬২ পর্যন্ত দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাকে উপরাষ্ট্রপতি করে অন্যান্য নেতারা হতবাক হয়েছিলেন কিন্তু ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তার কর্ম দক্ষতার মাধ্যমে সবাইকে ভুল প্রমাণ করেন এবং ১৩ মে ১৯৬২ সালে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ জির তুলনায় তার রাষ্ট্রপতির মেয়াদ বেশ চ্যালেঞ্জিং বলে প্রমাণিত হয়েছিল।

১৯৬২ সাল থেকে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন (৫ই সেপ্টেম্বর) সর্বসম্মতিক্রমে প্রতি বছর শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একই সময়ে তাকে ব্রিটিশ একাডেমির সদস্য করা হয় এবং ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানকে ইংল্যান্ড সরকার অর্ডার অফ মেরিটে ভূষিত করে। ১৯৬৭ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বলেছিলেন, “আজ আমি আমার শেষ ভাষণ দিচ্ছি, সম্ভবত রাষ্ট্রপতি হিসাবে এটাই হবে আমার শেষ ভাষণ।

রাধাকৃষ্ণণ এর পুরস্কার ও সম্মান

  • তার জীবনের সবথেকে বড় সন্মান এই যে ১৯৬২ থেকে প্রতি বছর 5 ই সেপ্টেম্বর তার জন্মদিনকে শিক্ষক দিবসে তার জন্মদিন উদযাপন শুরু হয়।
  • ১৯৫৪ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত হন।
  • ১৯৫৪ জার্মান “কলা ও বিজ্ঞানের জন্য অর্ডার পোর লে মেরিট” সন্মান পান।
  • ১৯৬৮ সালে তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি সাহিত্য আকাদেমি ফেলোশিপ পান যা সাহিত্য একাডেমি কর্তৃক একজন লেখককে দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মান।
  • ১৯৮৯ সালে বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তরফ থেকে তার নামে স্কলারশিপ শুরু করে।

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ অমূল্য বাণী

  1. “বইয়ের তাৎপর্য হলো আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে সেতু নির্মাণ করা!”
  2. “জীবনের আনন্দ এবং সুখ শুধুমাত্র জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ভিত্তিতে সম্ভব।”
  3. আমাদের দেশের বেকারত্বের একটি অন্যতম কারণ হলো কৃষিকাজে ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে প্রয়োগ না করা ।
  4. ধন সম্পদ ব্যক্তিকে পরিপূর্ণতা দেয় না। আত্মিক উন্নতির মাধ্যমে ব্যক্তি পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে।

বিস্তারিত পড়ুনডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর বাণী

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ সম্পর্কে তথ্য (FAQ)

কার জন্মদিনকে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করা হয়?

৫ই সেপ্টেম্বর ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর জন্মদিন কে ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

কেন ৫ই সেপ্টেম্বর “শিক্ষক দিবস” হিসাবে পালন করা হয়?

১৯৬২ সালে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ যখন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হন ,তখন কিছু পুরোনো ছাত্র ও তার বন্ধুরা ৫ই সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন পালন করার জন্য তাকে অনুরোধ করেন। সেই সময় তিনি বলছিলেন – “৫ই সেপ্টেম্বর আমার জন্ম দিবস পালন না করে সমস্ত শিক্ষক এর সম্মানে এই দিনটিকে “শিক্ষক দিবস” হিসাবে পালন করলে আমি আরও অধিক সম্মানিত ও খুশি বোধ করব।” তারপর থেকে ১৯৬২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি বছর ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ জন্মদিনকে তার সম্মানে “শিক্ষক দিবস” হিসাবে পালন করা হয়।

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ কবে রাষ্ট্রপতি হন?

১৯৬২ সালের ১৩ই মে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।